খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজের দু’টি গাড়ি জব্দ, মিলেছে ব্লাকমেইলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

বিনোদন প্রতিবেদন |
০১:১০ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২১

বিভিন্ন সময়ে আলোচিত-সমালোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, চিত্রনায়িকা পরীমণি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ বেশ ক’জন সহযোগীকে। আলোচিত সমালোচিত এসব ব্যক্তির বাসা অফিস থেকে বিদেশি মদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা বলেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গতকাল সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, রাজের বাসা থেকে আমরা গতরাতে দু’টি গাড়ি জব্দ করেছি। গাড়ি দু’টো কীভাবে কেনা, গাড়ি দু’টির কার নামে কেনা, কোথায় থেকে, কবে কেনা সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। এই গাড়ি কেনার অর্থ কীভাবে পেয়েছেন সেটাও আমরা খতিয়ে দেখবো।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার (৪ আগস্ট) রাতে গ্রেফতারের পর প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদকালেই রোববার (৮ আগস্ট) রাতে রাজের বনানীর বাসায় তল­াশি চালায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি দল। তল­াশি অভিযানে একটি হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪৬১৭) ও আরএভি-৪ মডেলের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৪০১) জব্দ করা হয়।
‘পরীমণির বাসায় মদের সাপ্লায়ার ছিলেন রাজ, এছাড়া কথিত মডেলদের দিয়ে বিভিন্ন পার্টি এবং ইনডোর প্রোগ্রামের আড়ালে বিশিষ্টজন-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্লাকমেইল ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তা আপাতত প্রকাশ করা হচ্ছে না।
সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, মাদক ব্যবসা করে কোনো ব্যক্তি যদি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে তার ব্যাংক হিসাব, আয়কর বিবরণী, সম্পদের কর-সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আমরা সে পথেই হাঁটছি। রাজ মাদকের সাপ্লাইয়ার সে ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সঙ্গত কারণে তার তার ব্যাংক হিসাব, আয়কর বিবরণী, সম্পদের কর-সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হবে।
গত শনিবার (৫ আগস্ট) রাতেও তার বাসায় তল­াশি চালিয়ে রাজ গ্র“প অব কোম্পানির প্রোফাইল বই, নজরুল ইসলাম রাজ কর্তৃক জালাল উদ্দিনের সঙ্গে করা বায়নানামা, চুক্তিপত্র, দলিল, পাসপোর্টের ফটোকপি জব্দ করা হয়।
র‌্যাবের অভিযানে প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর অফিস থেকে ৯৭০টি ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়।
গত রবিবার (৮ আগস্ট) অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, পরীমণি পিয়াসা, মৌ রাজসহ প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা জব্দ করা আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা তদন্তের এই পর্যায়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাদের প্রতারণা, অনৈতিক কার্যক্রম ও ব্লাকমেইলিংয়ের মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নানা পেশার অনেক নাম আমরা জেনেছি। তবে তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি।
রাজের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজের শোবিজ জগতে ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে তার কোনো মাল্টিমিডিয়া ছিল না। ২০১৪ সালের পর নাটক ও সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন। তার রাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসকে তিনি অনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন বলে দাবি র‌্যাবের। রাজকে গ্রেফতারের পর অনেকগুলো পর্নোগ্রাফির কনটেন্টও জব্দ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়, ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাসের পর ঢাকায় গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। তিনি বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতে বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন।
ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতে তার সংযোগ থাকায় অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন। অপর গ্রেফতার গ্রেফতার শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন তিনি।
সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করতেন। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতো। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করতো।
একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হতো। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা ও পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করতো। ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হত।
রাজ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এ জাতীয় অবৈধ আয় থেকে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট, ঠিকাদারি ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করতেন। এসব ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। গ্রেফতার প্রত্যেকের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে।
ডিজে পার্টিতে অংশ নিতেন বেশ ক’জন মডেল। তাদের নাম জেনেছে র‌্যাব। রাজ নিজেরই মাদকের সরবরাহকারী। তার বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে। রাজ ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের সবার সম্পর্কেই তদন্ত করা হবে।

প্রিন্ট