খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

চালের দাম বাড়ছেই : বিপাকে কাজ হারানো মানুষ

|
১২:১১ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২১

চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ, বিশেষ করে করোনাকালে যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, যাঁদের আয় কমে গেছে, তাঁদের জন্য বাজারের এই উর্ধ্বগতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই নয়। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ঈদের আগেও এক দফা বেড়েছিল। রাজধানীসহ বিভিন্ন বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে মোটা চালও পাওয়া যায় না। ঈদুল আজহার আগেও মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হতো। অন্যান্য চালের দামও আনুপাতিক হারে বেড়েছে। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে চালের এই দাম বাড়া মোটেও স্বাভাবিক নয়। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এ বছর বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সত্তে¡ও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরও এভাবে দাম বাড়ার কারণ কী? এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, চাল কলের মালিক ও মজুতদারদের কারসাজি আছে, বিশেষ করে যাঁরা অসৎভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাঁরা চাল কিনে মজুত করাকেই অধিক লাভজনক ভাবছেন। কেবল চাল নয়, বেড়েছে ডিম, মুরগি, চিনি এবং ভোজ্য তেলের দামও। কঠোর লকডাউনের অজুহাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা সবজির দামও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
চালের দামের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। দু’ভাবে সেটি হতে পারে। প্রথমত, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে। চাল আমদানির বিষয়ে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গত বছর আমদানি শুল্ক কমালেও আমদানির অনুমতি মিলেছে তিন মাস পর। এ সময়ে মজুতদারেরা ফাউ কামিয়ে নিয়েছেন। এবারও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি বেসরকারি উভয় খাতে আমদানি হলে সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে। অন্যথায় বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা থাকবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের গুদামে থাকা চাল টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে ট্রাকের সামনে নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে সরকারের অনুধাবন করা উচিত, তাঁরা কী দূরবস্থার মধ্যে আছেন। আগে হতদরিদ্র মানুষই লাইনে দাঁড়াতেন। এখন নিম্নমধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন লোকলজ্জা উপেক্ষা করে।
আমন মৌসুম আসতে এখনো অনেক দেরি। সে ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে চাল আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ী-মজুতদারেরা বাজারে বেশি পরিমানে চাল ছেড়ে দেবেন বলে আশা করা যায়। আমরা চালে স্বনির্ভর এটি দেখানোর জন্য আমদানি বন্ধ করে দিয়ে চাল কলের মালিক ও মজুতদারদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়লে লাভের গুড় পুরোটাই খেয়ে ফেলেন চালকলের মালিক ও মজুতদারেরা। তাই চালের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় কমানোর ওপরই জোর দিতে হবে।
 

প্রিন্ট

আরও খবর