খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি উপকূল স্লুইচ গেট সংস্কার জরুরি

|
১২:১৩ এ.এম | ০৮ অগাস্ট ২০২১

উপক‚লীয় জেলা খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার বাসিন্দাদের দুঃখের শেষ নেই। আম্পানের পর ইয়াস, এখন অতিবৃষ্টিতে একের পর এক দুর্ভোগে জীবন পার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় তাঁদের বুকে বুক লাগিয়েও বাঁধ বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ আমরা দেখেছি। এরপর টেকসই বাঁধের অভাবে অনিরাপদ উপক‚ল নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসের রেশ কাটতে না কাটতে বাঁধের ইস্যুও ঢাকা পড়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে কয়রাবাসীর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এল অতিবৃষ্টি, যার জেরে উপজেলাটির ৭০টি গ্রাম এখন পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও আবাদি জমি। একদিকে করোনা মহামারী, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার সাগরে উপজেলাটির মানুষ।
স¤প্রতি অতিবৃষ্টিতে কয়রার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পুকুর, রাস্তা-ঘাট, বাড়ির আঙিনা, আবাদি জমি সব পানিতে একাকার। ভেসে গেছে ৫ হাজার হেক্টরের বেশি মাছের ঘের, ডুবে গেছে ৯ হেক্টর জমির বীজতলা। আম্পানের সময় ঢুকে পড়া লোনা পানির কারণে গত বছর ধান চাষ করা যায়নি। এবার আবারও ধান চাষের চেষ্টা করতে গিয়ে অতিবৃষ্টিতে জমি ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেল। সেখানকার অধিকাংশ জমিতে একটি ফসলই হয় আমন ধান। ফলে সারা বছর ওই ধান চাষের জন্য উদগ্রীব থাকেন কৃষকেরা। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আবাদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, অতিবৃষ্টিতে খাল-বিল-জমির পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে ফসল উৎপাদনে আগামী বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জানালেন, পানি নিষ্কাশনের স্লুইচ গেটগুলো অধিকাংশই নষ্ট। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, সেখানে স্লুইচ গেট করা হয় ২১টি। বর্তমানে সক্রিয় আছে মাত্র কয়েকটি। বাকিগুলো সংস্কারের অভাবে অনেক দিন ধরে নষ্ট বা অকেজো হয়ে পড়েছে। কয়রা খুলনার উপজেলা হলেও সেটি আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সাতক্ষীরার অধীন। ফলে এখানকার বাঁধ, স্লুইচ গেট, নদী রক্ষার বিষয়গুলো তেমন নজর পায় না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেক কিছু করছেন মনে হলেও সেটি অনেকটা লোকদেখানোর মতোই। ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সংস্কার চলছে, কিন্তু সেটি টেকসই কিছু নয়। আবার বড় কোনো ঘূর্ণিঝড় এলে একই পরিণতি হবে। এখন স্থানীয় প্রশাসন জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু স্লুইচ গেট সংস্কার করা জরুরি। অকেজো স্লুইচ গেটগুলো চালু করার দ্রুত পদক্ষেপ নিন। পাউবো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কয়রাবাসীর প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হোন। সুন্দরবনের একেবারে কিনারে উপজেলাটির মানুষের দুঃখের অবসান হোক।
 

প্রিন্ট

আরও খবর