খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে বাল্য বিবাহ বাড়ছে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

|
১২:০৬ এ.এম | ০৭ অগাস্ট ২০২১

করোনাকালে বাল্য বিবাহ যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা যশোরের কেশবপুর উপজেলার পরিসংখ্যান থেকেই অনুমান করা যায়। ৩ আগস্ট পত্রিকার খবরে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যে গত ১৮ মাসে উপজেলায় ৩ হাজার বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। অভিভাবকের অসচেতনতা, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকদের মনিটরিং না থাকা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাল্য বিবাহের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে অভিভাবকেরা নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কনের বয়স বাড়িয়ে বিয়ের নিবন্ধন করা হয়। প্রশাসনের নজর এড়াতে গভীর রাতে এসব বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশে বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যেমন শিক্ষার্থীদের বয়স কমানোর প্রবণতা আছে, তেমনি বিয়ের সময় কনের বয়স বাড়ানোর দৃষ্টান্ত কম নয়। সবার জন্মনিবন্ধন থাকলে এটি সম্ভব হতো না।
করোনাকালে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বাল্য বিবাহ রোধে সরকারকে স্থানীয় পর্যায়ে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহŸান জানিয়েছে। স¤প্রতি রংপুরের বদরগঞ্জে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিয়ের দিন নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে মাস্তানরা তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। অভিভাবকেরা বিষয়টি থানা-পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে গোপনে মেয়েটির বিয়ের আয়োজন করছিলেন। এরপর মাস্তানরা বাড়িতে গিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্য বিবাহ হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫টি করে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রকৃতপক্ষে বাল্য বিবাহের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাল্য বিবাহ ঘটার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় হারের দিক থেকে সর্বোচ্চ।
এসব নেতিবাচক খবরের মধ্যেও প্রথম আলোয় প্রকাশিত নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের খবরটি আমাদের মনে আশা জাগায়। সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছে। অভিভাবকেরা বিয়ের আয়োজন করেছেন, এ তথ্য জানতে পেরে মেয়েটি তার এক বান্ধবীর সহায়তা চায়। এরপর ওই বান্ধবী ও তার বড় বোন স্থানীয় এক সাংবাদিককে বিষয়টি জানান। পরে তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানালে তিনি পুলিশের সহায়তায় বিয়ে বন্ধ করে দেন। আমরা এই সাহসী কিশোরীকে অভিনন্দন জানাই। মেয়েটি সচেতন ছিল বলে বাল্য বিবাহটি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে তার বান্ধবী, বড় বোন, স্থানীয় সাংবাদিক, ইউপি সদস্য ও ইউএনও সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। তাঁরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এতে প্রমাণিত হলো, সবাই সজাগ থাকলে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সম্ভব।
খুব তাড়াতাড়ি করোনাকাল শেষ হচ্ছে না। আমাদের হয়তো আরও কিছুদিন করোনার মধ্যে বসবাস করতে হবে। এ সময়ে যাতে বাল্য বিবাহ না বেড়ে যায়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আরও সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশিত। অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দিলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না বরং তাকে আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ এসডিজি বা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ, যার অন্যতম শর্ত বাল্য বিবাহ শূন্যে নিয়ে আসা।

প্রিন্ট

আরও খবর