খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার সময়ে বাল্যবিয়ে রোধে চাই সম্মিলিত উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ০৮ জুলাই ২০২১
করোনা মহামারীতে প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাপীঠগুলো বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ের নজির বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে যৌন নির্যাতন। একটি সমীক্ষায় জানা যায়, বিগত এপ্রিল থেকে অক্টোবর ২০২০ সময়ের মধ্যে দেশের ২১টি জেলায় অন্তত ১৩,৮৮৬ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। মোটা দাগে বাল্যবিয়ের মূল কারণ যদি শুধুই দারিদ্র্য ধরি, তবে এর ছোবল শুধু কন্যাশিশুর ওপর কেন? পুত্রশিশুর জন্য যদি সব কষ্ট বাবা-মা নিজেদের জন্য তুলে রেখে দিতে পারেন, তবে কন্যাশিশুর জন্য লাল শাড়িটা কেন? অথচ মিনা বহু বছর আগের শিখিয়েছে, মেয়েরাও ট্রাক্টর চালাতে জানে! দারিদ্র্যের পর বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় সামাজিক নিরাপত্তাকে। উঠতি বয়সে কন্যাশিশুকে সুরক্ষিত রাখতে ও পরিবারের সম্মান বাঁচাতে সামাজিক নিরাপত্তার নামে কন্যাশিশুকে তুলে দেওয়া হয় শ্বশুরবাড়িতে। তাহলে কি মা-বাবার কাছে কন্যাশিশুরা নিরাপদ নয়? তারা শ্বশুরবাড়িতে ভালো থাকবে ভাবতে অবাক লাগে! এই সুরক্ষার নামে কন্যাশিশুর স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে হত্যা করছি আমরা। একজন কন্যাশিশুকে আরেক শিশুর জন্মদানে, শারীরিক নির্যাতনের মুখে ঠেলে দিয়ে, এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েও ভাগ্য বলে হা-হুতাশ করি। অথচ এই কন্যাশিশুই সুযোগ পেলে তার সম্ভাবনাকে বিকশিত করে পরিবারের শক্তি হতে পারত। কভিড-১৯ শিশু-কিশোরদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে বা কেমন আছে তারা, এ-সংক্রান্ত র‌্যাপিড এ্যাসেসমেন্টগুলোতে উঠে এসেছে শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার কথা। দুঃখজনকভাবে, মোট বিদ্যালয়গামী শিশুর মধ্যে ১৩ ভাগ শিশুকে কখনও আর বিদ্যালয়ে পাওয়া যাবে না। অথচ, প্রস্তাবিত বাজেটে এই শিশুদের ফিরিয়ে আনার জন্য পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই, সর্বোপরি শিক্ষা বাজেটে নেই প্রয়োজনীয় বাড়তি বরাদ্দ। করোনায় শিশুরা বাসায় থেকে বিষণ্নতা ও একাকিত্বে ভোগে বলে নিজেরাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় এবং আবদ্ধ হয়েছেও। অনেক ক্ষেত্রে হটলাইন ১০৯৮ এ পরিচিতজনেরা জানিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে চাইলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা প্যানডেমিকে পরিবারগুলো সুযোগ পেয়েছে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করার। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমাদের জোরালোভাবে কাজ করতে হবে ‘মেন্টাল মডেল’ পুনর্গঠনে। শুধু তাই নয়, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ কভিড বাস্তবতার সঙ্গে যুগপৎ পরিবর্তন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুর দেশে, যেখানে ২ কোটি ২০ লাখ কন্যাশিশু, সেখানে কেবল সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব ভাবলে চলবে না। বাল্যবিয়ে বন্ধ শুধু শিশুদের জন্যই নয়, প্রয়োজন সবার জন্য। এ কারণে প্রয়োজন সমন্বয়। প্রয়োজন শিশুকেন্দ্রিক বাজেট বরাদ্দ, শুধু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুই নয়, করোনার নতুন অধ্যায়ে শিক্ষাকেন্দ্র খুলে গেলে সেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে ভাবতে হবে সেই শিশুদের ব্যাপারেও যাদের বাল্যবিয়ে হয়েছে, যাতে তাদের সম্ভাবনাগুলো পুরোপুরি নষ্ট না হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে বাল্যবিয়ে রোধে নিতে হবে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা- আইনের সঠিক প্রয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও সরকারের মধ্যে সঠিক ও সুসমন্বয়, জনগণের রেজিলিয়েন্স বৃদ্ধি এবং ধর্মীয় প্রথা, সংস্থা ও মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয়।
প্রিন্ট