খুলনা | বুধবার | ১৪ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সর্বগ্রাসী সংক্রমণ সমন্বিত ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ প্রয়োজন

|
১২:১৩ এ.এম | ২৫ জুন ২০২১

গত বছর যখন করোনার প্রথম ঢেউ আসে, তখন শহরাঞ্চলেই এর প্রকোপ বেশি ছিল। গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ এসে শহর-গ্রামনির্বিশেষে তান্ডব চালাচ্ছে। বিশেষ করে গত এপ্রিল-মে মাসে ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে বিশেষজ্ঞরা এর ভারতীয় ধরণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তাঁরা সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করা এবং কড়াকড়িভাবে আইসোলেশন মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কতটা শুনেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কেননা, সরকারিভাবে স্থলসীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব সমস্যাও ছিল। প্রথমত, ভারতে বেশ কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক আটকা পড়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, জরুরি পণ্য পরিবহনের কারণে কিছু ভারতীয় ট্রাকও বাংলাদেশে ঢুকেছে। এসব ট্রাকের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকেরা এসেছেন। এ ক্ষেত্রে ভারতফেরত নাগরিকদের সীমান্তেই করোনা পরীক্ষা ও আইসোলেশন বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। ফলে জেলা বা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আইসোলেশন করা হলেও খুব কাজে আসেনি। অনেকে দুই-চার দিন ইনোভেশন করে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর মাধ্যমেও ভারতীয় ধরনের করোনার বিস্তার ঘটেছে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কেন্দ্রে, উপজেলা থেকে জেলায়। এখন সারা দেশই করোনাকবলিত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নেই, এমন জেলাগুলোতেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, এমন ২২টি জেলার মধ্যে ৮টি জেলাই সীমান্তবর্তী নয়। সীমান্তের জেলাগুলোতে সংক্রমণ ঠেকাতে না পারায় অন্য জেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২২টি জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী অনেক জেলা তো আছেই, পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুরের মতো সীমান্তবর্তী নয়, এমন জেলাও আছে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? সরকার যেখানে সংক্রমণ বাড়ে, সেখানে কিছু প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি নেয়, যা ইতিমধ্যে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ‘লকডাউন’ সত্তে¡ও সীমান্তবর্তী জেলা-উপজেলা থেকে মানুষ বাইরে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো করোনা পরীক্ষার কাজটি করতে হবে তৃণমূলেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাকেন্দ্র করতে হবে। কোনো কোনো স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে তা করাও হয়েছিল। যাঁরা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের সবার অবস্থা একই রকম নয়। যাঁদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫-এর নিচে, কেবল তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। অন্যদের হাসপাতালে ভিড় করার প্রয়োজন নেই। সীমান্তবর্তী হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার সামর্থের ঘাটতি থাকলে তা-ও জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করতে হবে।
করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার নতুন করে সাত জেলায় সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলের ওপর (জনসাধারণের চলাচলসহ) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ জেলাগুলো হলো মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। প্রয়োজনে আরও বেশি জেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। সামনে ঈদুল আজহা। কোরবানির হাটের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
করোনার বর্তমান সঙ্কটকে ‘যুদ্ধাবস্থা’ হিসেবে নিয়ে এর মোকাবিলায় সমন্বিত ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হোক। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত কর্মসূচি দিয়ে এ সর্বগ্রাসী সংক্রমণ থামানো যাবে না।
 

প্রিন্ট

আরও খবর